একদিন বিকেলে আমিন তার দাদির কোলে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“দাদি, আল্লাহ আমাদের নবীকে কিভাবে বানিয়েছেন?”
দাদি আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“ভাই আমিন, এটা খুব সুন্দর প্রশ্ন। আমাদের নবীজী (দঃ) আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তিনি আমাদের মতো সাধারণ মানুষ না। তিনি তো ‘নূরের’ তৈরি!”
নূর মানে আলো?” আমিন বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে।
“হ্যাঁ ভাই,” দাদি বললেন।
“আমাদের নবী হলেন এমন এক আলো, যিনি অন্ধকার পৃথিবীকে আলোয় ভরে দিয়েছেন।”
নূর মানে আলো?” আমিন বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে।
সেই রাতে আমিন ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমে সে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলো।
সে এক বাগানে গিয়ে পৌঁছেছে—যেখানে গাছগুলো সোনার মতো ঝলমল করছে, ফুলগুলো থেকে বের হচ্ছে মিষ্টি আলো, আর বাতাসে শুধু এক নাম—”মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদ…”
বাগানের মাঝখানে ছিল এক নূরের ময়ূর। সে বলল,
“তুমি কি জানো, আমাদের প্রিয় নবীজিকে আল্লাহ সবচেয়ে আগে তৈরি করেছেন? তিনি বলেছেন—
‘আওয়ালু মা খালাকাল্লাহু নূরী’
(আল্লাহ যা প্রথম সৃষ্টি করেছেন, তা হলো আমার নূর)।”
আমিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “তাহলে তিনি তো খুব মহান!”
“হ্যাঁ, তিনি শুধু মহান না, তিনি আমাদের আদর্শ এবং রাহবার। তাঁর মধ্যে কোন পাপ নেই, কোন খারাপ কথা নেই। তিনি আল্লাহর হাবিব—সবচেয়ে প্রিয়।”
পরদিন আমিন স্কুলে গিয়ে বন্ধু রিয়াদকে বলল,
“তুই জানিস? আমাদের নবীজী শুধু মানুষ ছিলেন না, তিনি আল্লাহর নূরের তৈরি। তাঁকে আমাদের মতো দোষ-গুণের মানুষ ভাবা ঠিক না। এটা তাঁর অবমাননা।”
রিয়াদ বলল, “আমার তো মনে হতো তিনি আমাদের মতোই।”
তখন আমিন তার খাতা থেকে একটা সুন্দর করে লিখে আনা হাদীস দেখাল:
“Awalu maa khalaqal-laahu nooree” (আল্লাহ সবচেয়ে আগে যে জিনিস সৃষ্টি করেছেন তা হলো আমার নূর।)
রিয়াদ চুপ হয়ে গেল। তারপর বলল,
“তবে তো আমাদের নবী অনেক বড়। আমাদের উচিত তাঁকে আরও ভালোবাসা, তাঁর উপর বেশি বেশি দরুদ পড়া।”
সেই রাতে আমিন আর রিয়াদ মিলে একটা পোস্টার তৈরি করলো:
“আমাদের নবী আল্লাহর নূরের সৃষ্টি। তিনি দুনিয়ায় আলো এনেছেন। আমরা তাঁর উম্মত। তাই আমরাও আলোর পথেই চলবো।”
দাদি হেসে বললেন,
“আলোর নবীর উম্মত হয়ে যদি কেউ অন্ধকার পথে চলে, তবে সেটা কত দুঃখের কথা বলো তো?”
আমিন বলল,
“আমি প্রতিদিন ১০ বার দরুদ পড়বো, যেন নূরের নবী আমার নাম শোনেন।”
দাদি দুহাত তুলে বললেন,
“আল্লাহ তোমাকে এমন নূরের ফুল বানান, যারা নবীর আলো ছড়িয়ে দেয়!”
শিক্ষা:
নবীজী (দঃ) ছিলেন নূরের সৃষ্টি।
তিনি আমাদের মতো ভুল করা মানুষ না—তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ আদর্শ।
নবীকে ভালোবাসা মানে আল্লাহকে ভালোবাসা।
দরুদ শরীফ পড়া নবীর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ।
শিশুদের উচিত ছোটবেলা থেকেই নবীজির মর্যাদা বোঝা ও শিখা।