
প্রতিদিন সকালবেলা, সূর্য ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তের মতো, ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠে কিছু পরিচিত শব্দ—
“সুপ্রভাত… আজ কেমন আছো?”
শব্দগুলো ছোট, কিন্তু প্রতিটি অক্ষরের ওজন মন ছুঁয়ে যায়।
এমন নয় যে, মেয়েটা কাউকে না পেলে ভেঙে পড়বে,
তবে যখন কেউ প্রতিদিন নিয়ম করে খোঁজ নেয়, কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই পাশে থাকে—তখন তাকে শুধু “বন্ধু” বলে থামিয়ে দেওয়া যায় না।
সে যেন এক মন বোঝা মানুষ, এক নির্বাক ভরসা।
ছেলেটি প্রেমিক নয়, কোনোদিন “ভালোবাসি” বলেনি।
বরং সে বলে, “তোর মুখটা আজ এমন মলিন কেন?”
“চুপ করে থাকলেই তোর মনে মেঘ জমেছে, তাই না?”
এই ভাষা শুধু একজন যত্নশীল বন্ধুরই হতে পারে, যে মুখের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিষণ্ণতাটুকুও দেখতে পায়।
মেয়েটি তার কাছে নিজেকে উজাড় করে দেয়।
ভুল-ভাল কথা, অব্যক্ত ভয়, অসমাপ্ত স্বপ্নের কথা—সবই ভাগ করে নেয়।
কারণ সে জানে, ছেলেটি শুনবে।
হয়তো সবসময় উত্তর দেবে না, কিন্তু তার নীরব উপস্থিতিই হবে এক পরম আশ্রয়।
একটা বার্তা, কিংবা “মন খারাপ থাকলে আমাকে ফোন করিস” টাইপ নরম আশ্বাসের মতো।
এই বন্ধুত্বে লাল গোলাপের কোনো গল্প নেই,
কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার মতো কোনো রোমান্টিক স্মৃতি নেই।
বরং আছে ছায়া হয়ে পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস।
দাবি নেই, শুধু আছে একে অপরের প্রতি এক নীরব নির্ভরতা।
মেয়েটি জানে, তার ব্যস্ততার মধ্যেও এই ছেলেটি সময় বের করে খোঁজ নেবে।
সে জানে, নিজের সুখ-দুঃখ ফাঁকা কথায় বললেও, এই বন্ধুটি বুঝে নেবে—শব্দের ফাঁকে কী লুকানো আছে।
তাদের মধ্যে প্রেম নেই—অন্তত সামাজিক সংজ্ঞায় নয়।
তাদের সম্পর্কটা যেন এক শান্ত, নিভৃত আশ্রয়ের মতো।
একজন জানে, অন্যজন পাশে থাকবে—বিনা শর্তে, বিনা কারণে।
আর এটাই তো বন্ধুত্বের আসল সৌন্দর্য।
যেখানে সম্পর্কের দেয়ালগুলো ভেঙে দুটো মানুষ একে অপরের মানসিক নির্ভরতা হয়ে ওঠে।
তাকে দেখে বোঝা যায় না সে কত আপন,
তবে একদিন তার অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়—
এই ছেলেটি শুধু বন্ধু নয়,
সে এক অভ্যাস, এক যত্নের অভিধান
যার উপর চোখ বন্ধ করে নির্ভর করা যায়।