প্রতিবেদক :হৃদয় চক্রবর্তী।

জনবল সংকট ও অতিরিক্ত রোগীর চাপে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না

২৫ জুন ২০২৫ বুধবার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), পটিয়া এর যৌথ উদ্যোগে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মানোন্নয়নে সেবাগ্রহীতাদের অংশগ্রহণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সনাক পটিয়ার সাবেক সভাপতি এস.এম.এ.কে. জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র এরিয়া কোর্ডিনেটর এ.জি.এম. জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক পটিয়ার সহ-সভাপতি সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক। হাসপাতালের সেবা সেবার মানোন্নয়নে গৃহিত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাজ্জাদ ওসমান। বক্তব্য রাখেন জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোসাম্মৎ সুলতানা আকতার, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স অর্পিতা দত্ত, সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহিদা পারভিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি তালহা রহমান, মো. মারুফ উল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ প্রবাল চক্রবর্তী, জুনিয়র কনসাল্টটেন্ট ডাঃ সাম্য দাশ গুপ্ত, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ এ.বি.এম. আবু সুফিয়ান, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডাঃ আনজুমান নিগাদ উর্মি, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি আহমদ উল্লাহ, দৈনিক পূর্বকোণ প্রতিনিধি রবিউল আলম ছোটনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সেবা গ্রহীতাদের বক্তব্যে হাসপাতালের সেবার বিষয়ে অভিযোগ তুলে বলেন, যথা সময়ে নার্সের সেবা পাওয়া যায়না, সব সময় ওয়ার্ড ও টয়লেটঁ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেনা, অন্ত: বিভাগে সকাল বিকাল দুবার ডাক্তার ভিজিট করার কথা থাকলেও ১ বার ভিজিট করা হয়। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকে সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা নিতে এসে গেইট থেকেই ফিরে যায়। বর্হিবিভাগে ওষুধ কোম্পানী প্রতিনিধি উপস্থিতির কারণে সাধারণ রোগী সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। কখনো কখনো রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও সেবা প্রাপ্তিতে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন আবুল হাসেম, জেসমিন আকতার, সাকিবুল ইসলাম, মোহাম্মদ ছৈয়দ, কহিনুর আকতার, পারভিন আক্তার, খতিজা আকতার, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মান্নান প্রমূখ।প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থার অনেক পরিরর্তন হয়েছে। নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে আলট্রাসনোগ্রাফি ও রক্ত সঞ্চালন সেবা চালু হয়েছে। প্রতিদিন নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে, এনেস্থেসিস্ট না থাকার কারণে সপ্তাহে মাত্র ১ বার সিজারিয়ান ডেলিভারি চালু করা হয়। আজ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষাও চালু করা হয়েছে। একজন এফসিপিএস ডাক্তারের তত্বাবধানে সপ্তাহে ৬ দিন গর্ভবতী ও প্রসব পরবর্তী মা’দের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্হিঃবিভাগে গড়ে ৪০০ এর অধিক রোগীকে সেবা দেয়া হয় যার মধ্যে পটিয়ার বাইরে আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বোয়ালখালি ও কর্ণফুলি উপজেলার রোগীও আছেন। অন্তঃ বিভাগে ৫০ বেডের হাসপাতালে গড়ে ৮০ জনের বেশী রোগী ভর্তি থাকে। অথচ সে অনুয়ায়ি ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মচারী নাই। যার ফলে প্রত্যেক রোগীকে কাঙ্খিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে কাউকে সেবা বঞ্চিতও করা হচ্ছেনা। সবাইকে যথাসাধ্য সেবা প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, আজকের সভায় যে সব অভিযোগ ও পরামর্শ এসেছে তার সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এসব ছাড়াও আরো কোনো অভিযোগ ও পরামর্শ থাকলে নির্ভয়ে ও নি:সংকোচে যে কোন সময় জানানোর আনুরোধ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে এস.এম.এ. কে. জাহাঙ্গীর বলেন, সেবাগ্রহীতা ও সেবা দাতার মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন ও সম্পর্ক তৈরীর জন্য আজকের এই গণশুনানি আয়োজন। যেখানে রোগী বেশী বেশী সেখানে কাজও বেশী। সেখানে আলোচনা-সমালোচনাও হবে। তিনি হাসাপতাল কর্তৃপক্ষ ও সেবাগ্রহীতদের মধ্যে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে এ ধরণের গণশুনানি আরো বেশী করে আয়োজন ও সেবার মানোন্নয়নে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।