1. news@dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর : দৈনিক চাঁটগার খবর
  2. info@www.dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর :
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ০৭:০০ অপরাহ্ন

ক্ষুধাই একপ্রকার শাশ্বত অস্তিত্ব-হৃদয় চক্রবর্তী

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

জীবনের বাইশটা বছর স্বচ্ছন্দে কেটে গেল। তেইশও যাচ্ছে। অভিজ্ঞতার লিস্টে যুক্ত হয়েছে বিচিত্রিতা। কেন জানি, এখন অবধি সবচেয়ে নিষ্ঠুর, নির্মম সত্য আমার কাছে ক্ষুধা। মায়ের কথা তো বলতেই পারব না। বাবার মৃত্যুর কথা স্মরণ আছে। আকাশ ভাঙা শোকও হার মেনে গেল সেদিন ক্ষুধার কাছে। যত যাই বলুক লোকে, কৎ-পিপাসা উপেক্ষা করে কেউ সাধক হতে পারে না, বুদ্ধ হতে পারে না, এমনকি শোকে পাথরও না।

গত পরশু থেকে বাসায় চুলা জ্বলছে না। ঘরনীর অনুপস্থিতি তার কারণ। হিটারে পানি গরম করে চা করে, বিস্কুট দিয়ে খেলাম। ডিম সিদ্ধ করে খেলাম। দুধ, কলা, ফ্রুটস দিয়ে পাড়ি দিলাম দুই দিন। বাইরে বেরোলেও হালকা-পাতলা শুকনো খাবার ছাড়া খাই নি। গত রাতে বাসায় ফিরে দেখলাম, খাওয়ার মতো একটা সরিষার দানাও নেই। অলসতার কারণে ক্ষুধা নিয়ে শুয়ে থাকলাম। বালিশে মাথা রাখতেই যাবতীয় দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা এসে ঝেঁকে বসল মস্তিষ্কে। পরপর চারটা সিগারেট খেলাম। টেনশন কমে না; ক্ষুধা তো কমেই না, বর্শার মতো ফাঁড় মারতে থাকে পেটে। কয়েক ঘণ্টা বিছানায় এ-পাশ ওপাশ করতে করতে ক্লান্ত, কোনমতেই ঘুম আসে না। ক্ষুধা আর নির্ঘুমে শরীরে অবসাদ নেমে এলো, দাঁড়ানোই কষ্টকর হয়ে উঠল। তবুও উঠতে হলো, ছাড়তে হলো বিছানা।ভাত বসালাম চুলোয়। হয়ে এলে মনে হচ্ছিল, শুধু ভাতই লবণ মাখিয়ে খেয়ে নিই। তবুও কোনোমতে তরকারি রান্না বসালাম। আদা, রসুন, পেয়াজ বাঁটা, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচের গুঁড়া, হাতের কাছে যা পেয়েছি, কোনোমতে মশলা বানিয়ে আলু দিয়ে চিতল মাছ রান্না করলাম। স্বাদ কেমন হয়েছে, অনেস্টলি বলা মুশকিল। কারণ ক্ষুধার্তের মুখে, লবণ ঠিকঠাক পড়লে, সব খাবারই অমৃত। ক্ষুধার উপরে নির্ভর করে স্বাদ, রুচি। রুচি, টেস্ট, এগুলো একধরনের বিলাসিতা। যা শুধু পেট ভরা মানুষের জন্য। ক্ষুধার্তের কাছে খাবারই জীবন। হাড়িতে যতটুকু ভাত, তরকারি ছিল, সব সাবাড় করে ফেলেছি। মনে হলো, আরও নেই কেন।খাওয়া শেষে সব গোছগাছ করে, বারান্দায় বসে সিগারেট খেতে খেতে মনে হলো, ক্ষুধার্তের ঈশ্বর কে? আচ্ছা, তীব্রভাবে ক্ষুধার্ত কারো কাছে কেউ গিয়ে যদি ধর্ম জিজ্ঞেস করে, লোকটা কী বলবে উত্তরে? ভাত। বলবে তো? নিশ্চয়। এই নামাজ, পূজা, সেজদা, প্রণাম, তসবিহ, রুদ্রাক্ষ, এই ধর্ম, এই স্লোগান, মিছিল, কর্মসূচি, এই রাজনীতি, এই জাতীয়তা, দেশপ্রেম, সংস্কৃতি, এসব ক্ষুধার সামনে কী বাজেভাবেই না তুচ্ছ এবং হাস্যকর! অথচ পৃথিবীতে এই হাস্যকর জিনিসগুলো নিয়ে মারামারির শেষ নেই।কয়েকটা দিন কাউকে ক্ষুধার্ত রাখলে, সব নীতিনৈতিকতা, ইমান, বিশ্বাস, আদর্শ, চেতনা, এন্তার হাস্যকর জিনিসগুলো ভেস্তে যাবে, বর্জিত আবর্জনার মতোই ভেসে ভেসে।আজ আমার মনে হলো, পৃথিবীর সব ইমারত ভেঙে দিয়েছেন, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য— “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়: পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।” তাঁর এই বাক্য পৃথিবীর সবকিছুকে খানখান করে ভেঙে দিয়েছে। সমস্ত দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ধর্ম এক দিকে, সুকান্তের এই কথা একদিকে, তাঁর কথার ওজনে, ভরে, তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর হয়ে যায় সবকিছু। ক্ষুধাই একমাত্র শ্বাশত অস্তিত্ব। একমাত্র ভণ্ডরাই তা অস্বীকার করে, মনুষ্যসৃষ্টি হাস্যকর কোনো কিছুকে জীবনের মানে বানিয়ে নিবে।

.

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট