1. news@dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর : দৈনিক চাঁটগার খবর
  2. info@www.dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর :
সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে অনুষ্ঠিত ১৫ দিনের বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা: সবুজে ভরে উঠুক প্রিয় শহর। গৈড়লা কে.পি. বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত বাল্যকালের বিয়ে -বর্ষা আক্তার পিচ্চি পর্ব(৩) শুরু হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীনখান স্মৃতি মেধা বৃত্তি পরিক্ষা ২০২৫ এর ফরম বিতরণ কার্যক্রম মোর বাপ জান -সাবিরান হিমু মাইক্রোচালকের ‘ঘুমে’ স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৭ সদস্য হারালেন ওমান প্রবাসী বাহার বাল্যকালের বিয়ে- বর্ষা আক্তার পিচ্চি পর্ব(২) কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে হাসনাত-সারজিসসহ এনসিপি নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জন জুলাইয়ের শহীদের স্মরণে গণ-অধিকার পরিষদ কর্ণফুলি উপজেলা শাখা উদ্যোগে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল। ভুল শুধরে নাও-আব্দুল কাদের

বাল্যকালের বিয়ে- বর্ষা আক্তার পিচ্চি পর্ব(২)

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

 

রাত প্রায় বারোটা শিপু এদিক সেদিক করছে। চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা ও নেই। সে দেখল তার বোন আরাম করে ঘুমাচ্ছে। অন্ধকার রাতে ভয় করায় তাদের ঘরে হারিকেন জ্বালিয়ে রাখে। হারিকেনের আলোয় তার বোনের ফর্সা চেহেরা ঝলমল করছে। অন্য সময় বোনের এমন মায়াবী চেহেরা তার নজরে পড়েনি। সে ভাবল ঘুমালে মানুষকে হয়তো বেশি সুন্দর লাগে। পরিকল্পনা করল একদিন সে ঘুমের ভান করবে আর তার আপুকে বলবে আয়না ধরে রাখতে। যাতে কেমন লাগছে সেটা সে দেখতে পারে। পরক্ষণেই ভাবল, দেখতে হলে তো চোখ মেলতে হবে। তাহলে সুন্দর লাগবে কি করে? কারণ চোখ বন্ধ করার জন্যই তো সুন্দর লাগে। ধুর। ঘুমালে আমাকে কেমন লাগে দেখতেই পাইনা। মন খারাপ করে ওপাশ হয়ে চোখ দুটা বন্ধ করল।খানিকবাদেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলো। গহীন জঙ্গলে প্রায় আকাশ ছোঁয়া গাছগুলোর মাঝে আটকা পড়েছে দুজনে। গলা ছেড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেও কোনো জনমানবের দেখা মিলল না। ছোটাছুটি করছে এদিক থেকে সেদিক। বাহিরে বের হওয়ার পথ নেই। দিশেহারা হয়ে গেছে। যেন এক গোলক ধাঁধাঁয় আটকা পড়েছে দুজনে। মস্ত বড় একটা বাঘ তাদের সামনে বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে আসতেই শিপু চিৎকার শুরু করল। বাঘ বাঘ বাঁচাও বাঁচাও। শিপুর চিৎকার শুনে জাগনা পেয়ে কি হইছে কি হইছে বলতে আরম্ভ করছে ফরিদা। শিপু তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। ফরিদা বুঝে গেল শিপু দুঃস্বপ্ন দেখেছে। সে তার ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, পাগল ছেলে একটা। এত ভয় কিসের আমি তোর আপু আছি না? আমি থাকতে তোর কিছু হতে দিব? শিপুর শরীর রীতিমতো ঘামছে। টপটপ করে কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। ফরিদা পাশে থাকা তালপাতার হাতপাখা দিয়ে বাতাস করল। শিপু বোনকে শক্ত করে আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে পড়ল।

প্রতিদিনের মতো ফরিদা খাওয়া দাওয়া শেষে চাটনি বানিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিলে যাওয়ার। এরই মধ্যে লতা ফরিদাকে বলল, শোন মা, আজ তোর কোথাও যেতে হবেনা। তুই চুলে চিরুনি করে নতুন একটা জামা পড়ে নে। তোর এক চাচা তোকে দেখতে আসবে। অনেকদিন আসা যাওয়া নেই। তুই বড় হওয়ার পর তোকে সেইভাবে চেনে না দেখেনি। তোর আব্বা কে খবর পাঠাসে আজকে আসবে। ফরিদার শিশুসুলভ মনটায় ধুকপুক শুরু হইছে। কিছুটা ভয় কিছুটা সাহস তার মনে সঞ্চার করছে। তার মা তার কোনো কথা শোনার আগেই চলে গেল আরেক কাজে। অনেক ব্যস্ত অপরিচ্ছন্ন ঘর দুয়ার পরিষ্কার করতে হবে। সবকিছু গোছাতে হবে। ফরিদার মনে কতক প্রশ্ন ঘুরপাক করেও উত্তর মেলাতে পারল না। হয়তো কিছুটা ধোঁয়াসা কেটে যেত যদি শিপু আজ বাড়ি থাকত। কিন্তু সে তো স্কুলে গেছে। সুতরাং তার অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো পথ নেই।
সকাল এগারোটা নাগাদ পাড়ার এক পান খাওয়া মুরুব্বি তাদের বাড়িতে এলো। ফরিদা দেখেই চিনতে পেরেছে এটা তার পাড়ার মেম্বার সাহেব। সবাই তাকে দেখলেই সালাম কালাম করে। ফরিদাও কয়েকবার সালাম দিয়েছে। মায়ের কথায় নাস্তা নিয়ে সামনে গেল ফরিদা। লাল রঙের সালোয়ার কামিজে তাকে লাল টুকটুকে লাগছে। মেম্বার সাহেব সরল মনে ফরিদাকে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছিস মা?
সে কোমল স্বরে উত্তর করল ভালো।
মায়ের ইশারায় উঠে গেল ফরিদা। সে বুঝে উঠতে পারল না। শুধুমাত্র ভালো আছি কিনা জানার জন্য এসেছেন, নাকি অন্য কারন আছে? যা থাকে থাক বলেই, সে মাথা থেকে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে তাকে কেমন লাগছে দেখতে আয়নার সামনে গেল। সে নিজেকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। কি সুন্দর আমি। সারাদিন মাঠে মাঠে না দৌড়াদৌড়ি করলে আরও সুন্দর হতাম। সে ভাবল, আর যাবনা মাঠে পরক্ষণেই বুলবুলির কথা মনে পড়ে বলল তাহলে আমার বুলবুলি যে না খেয়ে মরবে। থাক আমি যেমন আছি তেমন ই ভালো। মায়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সে এক ছুটে বাড়ির পেছনের আমবাগানে গেল। কিছুক্ষণ পরে আমগুলো এক ছেড়া পলিথিনে ভরে বাড়ি ফিরল। এসে দেখল, সেই মেম্বার চলে গেছে। বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল যাক বাবা বাঁচা গেল। এখন আচ্ছামত আম খাওয়া যাবে।

ফরিদাকে শাড়ি পড়ানো হচ্ছে। পাড়ার এক কাকি তাকে বেশ যত্ন করে সাজাচ্ছে। সবেমাত্র পঞ্চম শ্রেণী পাস করা ফরিদাকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে, সে ছোট আছে। উঁচু লম্বা, উজ্জ্বল ফর্সা চেহারা। উচ্চতায় মাকে ছুঁই ছুঁই। শিপু বোনের পাশের জিনিসপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করছে আর আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলছে, আপুর বিয়ে হবে খুব মজা হবে, আপুর বিয়ে হবে খুব মজা হবে। শিপুর কথা ফরিদার বুকে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করছে। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।তার পাশে কাকি ছাড়া কেউ নেই, যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে কাঁদো কাঁদো গলায় তার কাকিকে বলল আমি তোমাদের কাছে খুব বোঝা তাইনা? মেয়ে হয়ে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আল্লাহ আমাকে জন্মের পরেই কেন মেরে ফেললেন না। ফরিদার হৃদয়বিদারক কথা শুনে তার কাকি অশ্রুসিক্ত স্বরে বলল, তোর বাবার মুখের উপর তো আমরা কখনো কথা বলিনা। আর সেই সাহস টাও আমাদের নেই। তুই ও তো কম চেষ্টা করলি না তাকে বোঝানোর। যে বুঝেও না বুঝার ভান করে তাকে কিভাবে বুঝাই বল। তুই চিন্তা করিস না মা। আল্লাহ তোর সহায় হবেন। ফরিদা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। এতক্ষণে বরপক্ষ চলে এসেছে। তাকে বাহিরে বের করা হলো। বিয়ের যাবতীয় কার্যক্রম প্রায় ঘন্টা খানিক পরে শেষ হয়ে গেল। সবশেষে বিদায়ের পালা। যে শিপু খানিক আগে আনন্দে আত্মহারা ছিল, সে এখন বোনকে জড়িয়ে ডুকরে উঠে কাঁদছে। সে কিছুতেই তার বোনকে যেতে দিবেনা। ফরিদাও ভাইয়ের কান্নায় নিজেকে সামলাতে পারল না। পাড়ার এক মুরুব্বি বলল, সুপা দেওয়া শেষ আর দেরি করা যাবেনা। ফরিদাকে তার স্বামী জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে প্রিয় কোনো জিনিস তার থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের এমন পরিস্থিতি দেখে তার এক চাচা বলল, ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া কি খুব বেশি দরকার ছিলো? ও তো এখনো জীবনের কিছুই বোঝেনি। সামান্য একটা ভুলের জন্য মানুষ সারাজীবন অনুতপ্ত করে। ফরিদার বাপের ও পস্তাতে হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট