1. news@dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর : দৈনিক চাঁটগার খবর
  2. info@www.dainikchatgarkobor.com : দৈনিক চাঁটগার খবর :
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

বাল্যকালের বিয়ে -বর্ষা আক্তার পিচ্চি – পর্ব(১)

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

 

শহরের বিলাসবহুল জীবন থেকে বহুদূরে এক অজোপাড়ায় বেড়ে উঠে ফরিদা। যেখানে প্রকৃতির ছোঁয়ায় মানব মন জেগে উঠে। বিদ্যুৎতের কোনো স্পর্শ সেখানে গিয়ে পৌঁছায়নি। তপ্ত দুপুরে উঠানে বটগাছের নিচে সবাই একত্রে বসে আসর জমায়। আষাঢ়- শ্রাবণ মাসে টিপটিপানি বৃষ্টিতে পরিবেশটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। রাস্তায় হাঁটু অব্দি পানি, কাঁদা যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেখানে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের মানুষেরা বাহিরে ঘুরতে বের হয়, সেখানে ওই গ্রামে সন্ধ্যা আটটার মধ্যে সকলে বিছানায় ঘুমে বিভোর। হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা, খাওয়া -দাওয়া বিছানা বুনানো। ভোরের আলো ফোটার আগেই গ্রামের প্রত্যেকে যে যার কাজে লেগে পড়ে। ফরিদার বাবা মিলন হাল কৃষির কাজ করে। মা গ্রামে অন্য এক মহিলার সঙ্গে বিছানা বুনায়। ফরিদা বড়, তার ছোট এক ভাই আছে। সে এবার ক্লাস থ্রি- তে পড়ে। গ্রামে একটা মাত্র স্কুল। সেটাও অনেক দূরের পথ। ক্লাস শুরুর ঘন্টা খানিক আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। ফরিদার ভাই শিপু হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে তার আব্বাকে বলে, আব্বা আমাকে সাইকেল কিনে দাও। আমি আর হাটঁতে পারব না। তার আব্বা বলে, একটু কষ্ট করে যাওয়া আসা কর বাপ, ফরিদাকে দেখ, সে মেয়ে হয়েও কত কষ্ট করে কত পথ অতিক্রম করেছে। রোজ স্কুলে যেত, পড়াশোনা করত, কত সুনাম পেতাম। তুইও একটু কষ্ট কর বাপ। শিপু আর জেদ ধরেনা কারন সে এ পর্যন্ত না হলেও একশবার বলেছে প্রতিবার সে এই একি কথা শুনেছে। এক কথা বারবার শুনতে তার ইচ্ছে করেনা।

আজকে সে বায়না ধরেছে স্কুলে যাবেনা। সে তার বোনের সাথে যাবে গরু- ছাগল চড়াতে। ফরিদা অনেক জোরাজুরি করার পরেও সে তার ভাইকে স্কুলে পাঠাতে পারল না। অবশেষে ফরিদার মা লতা দুই ভাইবোনকে বিলে পাঠাল। তারা ছয়টা ছাগল আর একটা বাছুর নিয়ে বিলে গেল। যেতে যেতে দুজনে রাস্তার পাশের আম গাছের আম পাড়ল। জমির দুইপাশে বয়ে চলা ড্রেনের পরিষ্কার পানিতে আমগুলো ধুয়ে নিল। তারপর গল্প করতে করতে ফরিদার চেনা পরিচিত আস্তানায় পৌছে গেল দুজনে। ফসল কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। আপাতত জমিতে কোনো ফসল নেই। তারা ছাগল বাছুরকে ছেড়ে দিয়ে খেঁজুরের পাতা দিয়ে বানানো পাটিতে বসে পড়ল। শিপু হাতে করে একটা বস্তার সাথে একটা কাস্তে নিয়ে এসেছে এক বস্তা ঘাস কাটার জন্য। ফরিদা কাস্তে দিয়ে আমগুলো ছোট ছোট টুকরা করে নিল। সে আসার সময় লবণ, হলুদ, মরিচ দিয়ে চাটনি বানিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে জামার এক কোণায় গিট বেঁধে রেখেছিলো। সেগুলো বের করল এবং পলিথিনের অন্য পাশে আম রেখে দুজনে চাটনি দিয়ে মজা করে খেল। খাওয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে শিপু ফরিদাকে প্রশ্ন করল, আপু তোকে আব্বা আর স্কুলে যেতে দেয়না কেন??
ফরিদা মুখটা ফ্যাকাশে করে উত্তর করল, মেয়েদের পড়াশোনা করে কি লাভ? আমরা তো আর চাকরি বাকরি করতে পারব না।খালি খালি টাকা পয়সা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি আমিও ছেলে হতাম, তোর মতো আমাকেও জোর করেই স্কুলে পাঠাত, কিন্তু আমি যে মেয়ে তাই আমার পড়ার কোনো দাম নেই। কতবার আব্বার হাতে পায়ে ধরে কান্না করে বললাম, আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে৷ তাদের সেই একি কথা, আমার পড়াশোনা বাবদে কোনো টাকা তারা খরচ করতে রাজি নয়। বলে যে, তোকে তো একদম মূর্খ বানাইনি। অক্ষর চেনার মতো বিদ্যা দিয়েছি। আর মেয়েদের বেশি শিক্ষিত করতে নেই, তারা অবাধ্য হয়ে যায়। বাবা মাকে দাম দেয়না, নিজের স্বাধীন ভাবে চলতে চায়। যার কারেন আমার পড়াশোনা বাদ। পঞ্চম শ্রেনি পাস করার পর আজ ছয় মাস হলো এই জায়গা টাই আমার সঙ্গী। সকালে আসি বিকালে যাই। যেদিন খুব বেশি মন খারাপ হয় সেদিন একাই নীরবে কাঁদি। আমার দুঃখের সঙ্গী এরা।
শিপুর ছোট মাথায় এতগুলো কথা ঢুকেছে কিনা সে জানেনা, তবে ফরিদা এ ব্যাপারে আর কথা বলতে চাচ্ছে না। তাই প্রসঙ্গটা বদলে ফেলল। সে দূরে মেহগুনি গাছে বসা দুটা শালিক পাখিকে দেখে বলল, দেখ ভাই পাখিদের জীবন কত স্বাধীন ধরা ছোঁয়ার কোনো নিয়ম নেই। যেখানে যেতে মন চায় সেখানে উড়ে চলে। স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রয়োজনও পড়েনা তাদের। জীবন নিয়ে তাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমরাও যদি পাখি হতাম কতই না ভালো হত বল। শিপু এতক্ষণ কথাগুলো শুনে লাফ দিয়ে উঠে বলল, ইচ্ছে মতো গাছের পাকা পাকা আম খেতে পারতাম তাইনা আপু?
ফরিদা মৃদু হেসে উত্তর করল হ্যাঁ, রে ভাই। তুই আর আমি ডানা মেলে আকাশে উড়তাম। আর সব গাছের পাকাপাকা ফল খেতাম।
শিপু হাতে তালি দিতে দিতে বলল, কি মজা কি মজা।

সন্ধ্যা বাজে ছয়টা লতা সবাইকে খাবার দিল ময়দার রুটির সাথে আলুর ভর্তা। শিপু মরিচ খেতে না পারায় তার জন্য সেমাই রান্না করা হয়েছে। সকলে খেতে আরম্ভ করেছে। মিলন রুটির টুকরা মুখে দিতে দিতে বললো, শিপু বাপ তোর পড়াশোনার কি খবর? কুদ্দুসের বেটারে এবার তোর পিছনে ফেলতেই হবে। শালা বেটা বড় বড় লেকচার দেয়। এবার আমিও লেকচার দিমু। তুই খালি ভালো করে পড়ে ওর বেটারে টপকে ফেল। তারপর ওর বাহাদুরি আমি ছুটাব। লতা বিস্ময় হয়ে বললো, এমন কথা কেন কও তুমি? ছেলেটারে দোয়া করো যেন মাথায় পড়া সেট করতে পারে। বাপ শোন, তুই যেমন পারিস তেমন করেই পড়। কাউকে টপকাতে হবেনা, খালি ফেল না করলেই হলো। মিলন রেগে মেগে অস্থির হয়ে বললো, ছেলেকে তোমার জন্য আর মানুষ করতে পারমু না। পড়াশোনাতে প্রতিযোগিতা থাকলেই না ভালো পড়াশোনা হবে। এমনি এমনি তো আর মানুষ বলেনা মেয়েদের বুদ্ধি হাঁটুর সমান। যেগুলো বুঝো না সেসব নিয়ে মাথা ঘাটাবে না। বাপ ছেলের মাঝে একদম কথা বলতে আসবে না। আজ আমি পরিষ্কার বলে দিলাম। লতা মুহূর্তেই মুখটা ছোট করে ফেলল। ফরিদা তাদের কথা মন দিয়ে শুনল। কথা বলতে গিয়ে ও গলায় কথা আটকে গেল ফরিদার। সে বলতে চেয়েছিল আমি তো শামসুরের মেয়েকে অতিক্রম করে এক রোল করেছিলাম কেন আমায় আর পড়ালে না? আমার সাথে এমন দূর্নীতি কেন? ফরিদা গলায় আটকে যাওয়া কথা আবার হজম করে নিল। কারণ সে বাপের মুখে একটা টু শব্দ ও করতে পারেনা তার সাহসে কুলোয় না। মুখ বুজে খাবার খেয়ে নিল। কেউ আর কোনো কথা বাড়ালো না। নীরবে খেয়ে যে যার ঘরে ঘুমাতে গেল।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট