আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য। চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। গণমুখী ও মানবীয় গুণাবলীর কারণে তিনি দল ও দলের সমান জনপ্রিয়।
তিনি চট্টগ্রাম-১৪ (বর্তমান-১৫, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে প্রথম বার মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ৫ম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ এ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হন। ২০০১ এ চট্টগ্রাম-১৫ আসনে চারদলীয় জোটের বাইরে এককভাবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন কিন্তু বিশদলীয় জোট ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তা প্রত্যাহার করে নেন।
অনেক রক্ত নদী পেরিয়ে ২৪ এর আগস্টে এসে আমরা নতুন এক "জুলাই বিপ্লব" এর সাক্ষী হলাম। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল একদল শিক্ষার্থী। বৈষম্য বিরোধী ও কোটা বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গৌণ মনে হলেও নেপত্যে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন চট্টগ্রামের রাজপথের লড়াকু সৈনিক জামায়াত নেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।
জনাব শাহজাহান চৌধুরী ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ৬ এপ্রিল সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদর পাড়ায় একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম ওবাইদুর রহমান চৌধুরী ও মরহুমা ছমুদা বেগম দম্পতির জেষ্ঠ্য সন্তান তিনি। ৬ ভাই ও বোনের মধ্যে শাহজাহান চৌধুরী সবার বড়। তাঁর সহধর্মিনী জোহরা বেগম গৃহিনী। তিনি তিন মেয়ের জনক এবং সকলেই বিবাহিতা।। তাঁর দাদা ছিলেন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হামিদ আলী চৌধুরী। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলোকিত মনীষা ও খ্যাতিমান মানবতাবাদী চিকিৎসক মরহুম মোজাহারুল হক সাহেবের ভাগিনা এবং আমেরিকা প্রবাসী খ্যাতিমান চিকিৎসক মরহুম মোহাম্মদ ইসমাইল সাহেবের ভাতিজা।
জনাব শাহজাহান চৌধুরী সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল হতে এসএসসি, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন কমার্স ‘ এবং চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে বিকম পাস করেন এবং পরবর্তীকালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ব্যবসা শুরু করেন । তিনি স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ হামিদ এন্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন, এখন সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ।
জনাব শাহজাহান চৌধুরী শিশু সংগঠক হিসেবে 'ঝিংগে ফুলের আসর' প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পালন করেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগরী ঝিংগে ফুলের আসর এর পরিচালক ছিলেন। শিশু সংগঠক হিসেবে বলিষ্ট ভূমিকা পালনের
মাধ্যমে রাজনীতি জীবনের সূচনা করেন। জামায়াতে ইসলামীর কোতোয়ালী থানার আমিরের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কঠোর সংগ্রামী জীবনের শুরু। দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির হয়ে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমির ও আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য এবং সম্প্রতি তিনি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে
কেন্দ্রীয় সংগঠনের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।।
জনাব চৌধুরী দুই বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে অগ্রণী ভূমিকা ও অসামান্য অবদান রাখেন।
জনাব চৌধুরী ১৯৯১ ও ২০০১ খ্রি. -এ সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসন থেকে দুই বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে অগ্রণী ভূমিকা ও অসামান্য অবদান রাখেন।
জনাব শাহজাহান চৌধুরী ২০০১-২০০৬ খ্রি. পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় দলের হুইপ, সংসদীয় হাউজ কমিটির সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ সদস্য, সংসদীয় ইঞ্জিনিয়ারিং সাব কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৪-২০০৫ খ্রি. পর পর দুই বার জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকার মনোনীত হন। এছাড়া ঐ সময়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উন্নয়ন এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিদর্শক হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১-১৯৯৬ খ্রি. পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঝাউতলা, ফিরোজ শাহ কলোনি ও শের শাহ কলোনিসহ অন্যান্য স্থানে প্রকৃত ভূমিহীনদের প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
লোহাগাড়া, চকরিয়া ও বাঁশখালী পাহাড়ি অঞ্চলে রাশিয়ার গ্যাস কোম্পানি কতৃক পাকিস্তান আমলে খননকৃত গ্যাস কুপ পুনঃ খনন করে গ্যাস উত্তোলনে সেমিনার ও বিদেশি ডেলিকেটসহ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেন।
দোহাজারী থেকে টেকনাফ ভায়া কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের দাবী জাতীয় সংসদে বার বার উত্থাপন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার গঠিত কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং এ তৎপরতার অংশ হিসেবে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আশ্রিত উপজাতি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এ প্রচেষ্টায় তখন হাজার হাজার শরণার্থী দেশে ফিরে আসে।
তিনি সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ, সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা, দক্ষিণ ছমদর পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছমদিয়া এতিম খানা ও হেফজখানা, গৌরস্থান উচ্চ বিদ্যালয় (লোহাগাড়া), ইলোমিনেট স্কুল এন্ড কলেজ, (ডবলমুরিং) বড়হাতিয়া আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসা, লোহাগাড়া। ইলোমিনেট স্কুল এন্ড কলেজ, ডবলমুরিং- প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছমদরপাড়া শাহী জামে মসজিদ নান্দনিক ডিজাইনে পূননির্মাণে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। ২৪ -এর গণ অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্ত্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে তিনি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার রাস্তাঘাট ও অবকাটামোগত উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি বহুল প্রতীক্ষীত লোহাগাড়া উপজেলা সদর এলাকাকে পৌরসভায় উন্নীত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আশা করছি তার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় লোহাগাড়া দ্রুত পৌরসভায় উন্নীত হবে।
তিনি ডা. ইসমাঈল স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও সময় ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান এবং সেক্রেটারি- মুসল্লি পরিষদ, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।
জনাব শাহজাহান চৌধুরী সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ও ব্যক্তিগত সফরে শ্রীলঙ্কা, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, কেনিয়া ও মালয়েশিয়া সফর করেন।
শাহজাহান চৌধুরী দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, হরতাল, অবরোধে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আপসহীন মাঠের গনমানুষের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
শাহজাহান চৌধুরী বার বার কারা নির্যাতিত নেতা। তিনি প্রায় ৯ বছর জেল খেটেছেন। সর্বশেষ তিনি ৩৩ মাস জেল খেটে বের হয়েছেন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে। কারাগারে থাকাকালীন তিনি তাঁর মমতাময়ী মাকে হারিয়েছেন। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বার বার মিথ্যা মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও নির্দয় আচরণের শিকার হন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ম্যান্ডেটবিহিন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তাঁকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক মাস আটক রেখে তাঁকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে কারাগারের গেইট থেকে পুনঃ গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য পদে জামায়াতের নমিনি ছিলেন। লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার। সে সময় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় তিনি দীর্ঘ ১৪ মাস কারাগারে আটক ছিলেন। ১/১১ অসাংবিধানিক সরকারের সাথে আঁতাত করে ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখ্যনের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ খ্রিস্টাব্দে হাইকোর্ট চত্ত্বর থেকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখে। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে তিনি ২০১২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১/১১ জরুরি সরকার দুদকের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে ৭ বছরের সাজা প্রদান করেন । এ সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করলে দুদক অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে হাইকোর্ট তাকে বেকসুর খালাস দেন। সেই সময় সরকার খালাসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ দীর্ঘ শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন, তাঁর জব্দকৃত গাড়িটি ক্ষতিপূরণসহ ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেন এবং গাড়িটি তিনি ফেরত পান। যা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ১৪ মে তিনি নিজ বাড়ি থেকে ঈদুল ফিতরের পূর্ব রাতে গ্রেপ্তার হয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পেয়েও জালিম সরকারের রোষানলে পড়েছেন। জেলগেট থেকে পুনঃ পুনঃ গ্রেপ্তার হন তিনি। অন্যায়ভাবে পর পর ৫ বার জেল গেট থেকে গ্রেপ্তার ও আইনি প্রক্রিয়ায় অবশেষে ৩৩ মাস পর মুক্তি পেয়েছিলেন।
একজন মানবতাবাদী, নির্লোভ ও নির্মোহ ব্যক্তি হিসেবে সারা দেশে সাধারণ মানুষের কাছেও সমান জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মোয়াজ্জেম হোসেন
লেখক- আলোকিত গুণীজন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া।