নৈতিক অবক্ষয় আজ সমাজে এক ভয়ংকর মহামারি। দুর্নীতি, অসততা, মাদকাসক্তি, অশ্লীলতা, ধর্ষণ, খুনোখুনি, দাম্পত্য ভাঙন—এসবের জন্য শুধু ব্যক্তিকে নয়, পরিবার ও সমাজকেও দায়ী করা যায়। একজন মানুষকে সৎ ও নীতিবান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পরিবারে ভালো শিক্ষা ও সমাজে ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
১. পরিবার: নৈতিকতার প্রথম পাঠশালাঃ
পরিবারই শিশুর প্রথম শিক্ষা কেন্দ্র। শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: "হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর..."
(সূরা আত-তাহরীম: ৬)
হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকের থেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার সম্পর্কে দায়িত্বশীল..."
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
কাজেই যদি পরিবারে ইসলামী পরিবেশ না থাকে, বাবা-মা যদি সন্তানকে সময় না দেয়, তাহলে তার নৈতিক চরিত্র গঠন হবে কীভাবে?
২. সমাজ: মূল্যবোধ গঠনের আয়নাঃ
সামাজিক পরিবেশ মানুষের চিন্তা-ভাবনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যখন সমাজে অন্যায়কে উৎসাহ দেওয়া হয়, সৎ মানুষকে অবহেলা করা হয়, তখন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে কোনো মন্দ কাজ দেখে, সে যেন তা তার হাত দিয়ে পরিবর্তন করে; যদি না পারে, তবে মুখ দিয়ে; আর যদি এটাও না পারে, তবে অন্তরে ঘৃণা করুক—এটাই হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।"
(সহীহ মুসলিম: ৪৯)
আজকের সমাজে অশ্লীলতা, চটুলতা ও ভোগবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে—এটা সরাসরি নৈতিক অবক্ষয়ের দরজা খুলে দেয়।
৩. ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ঃ
ধর্ম হলো নৈতিকতার মূল ভিত্তি। কিন্তু আজ বহু পরিবারেই কুরআন শিক্ষার পরিবেশ নেই। সমাজেও ইসলামিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
আল্লাহ তাআলা বলেন: "আর নিশ্চয়ই তোমরা ছিলে উত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য উত্তীর্ণ; তোমরা ভাল কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো..."
(সূরা আলে ইমরান: ১১০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "আমি প্রেরিত হয়েছি সুন্দর চরিত্র পরিপূর্ণ করার জন্য।"
(সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরাদ)
তাই ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া নৈতিকতা চর্চা অসম্ভব।
৪. করণীয় ও সমাধান
পরিবারে করণীয়:
সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা ও আদব শেখানো।
নিজে আমল করা ও ভালো উদাহরণ তৈরি করা।
নামায, কুরআন পাঠ ও দোয়ার পরিবেশ গড়ে তোলা।
সমাজে করণীয়:
মিডিয়ায় নৈতিক কনটেন্টের প্রসার।
স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষার পাঠ বাধ্যতামূলক করা।
ইসলামিক সভা-সেমিনার, যুব সমাজে দাওয়াহ কার্যক্রম বাড়ানো। আল্লাহ বলেন: "নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।"
(সূরা আর-রাদ: ১১)
নৈতিক অবক্ষয়ের দায় ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। পরিবার যদি ব্যর্থ হয়, সমাজ যদি পঁচে যায়—তাহলে একজন মানুষও সৎ ও নীতিবান হয়ে বাঁচতে পারবে না। তাই সময় এসেছে—পরিবার ও সমাজকে ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার আলোয় গড়ে তোলার। ইসলামই পারে এই অবক্ষয়ের জবাব দিতে।